সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে কতজন নিহত হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই কারোরই। তবে এই সংখ্যা বিশ থেকে পচিশ জনের মত হতে পারে বলে ধারণা করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। সংবাদচর্চা নারায়ণগঞ্জের চারটি স্থানে নিহত হওয়া ১৪ জনের খবর নিশ্চিত হয়েছে। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
সূত্র মতে, ঢাকাসহ দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ নারায়ণগঞ্জেও লাগে। ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে স্বল্পসংখ্যাক শিক্ষার্থী স্বল্প সময়ের জন্য কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে মাঠে নামে। তারা এদিন কিছু সময় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে ফিরে যায়। পরদিন আন্দোলকারিদের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। ১৬ জুলাই ব্যাপক সংখ্যা শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে করে শহরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিনও তাদের আন্দোলন ছিল অহিংস। পুলিশও ছিল সতর্ক। ফলে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এদিন ঘটেনি। তবে ১৭ জুলাই শুরুর দিকে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও দুপুরের দিকে চাষাড়ায় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়াকে কেন্দ্র করের শুরু হয় ব্যাপক উত্তেজনা। যা উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় পুরো চাষাড়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণিত হয়।
সূত্র জানায়, ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শহর, সাইনবোর্ড, ভূঁইগড়, জালকুড়ি, চিটাগাং রোড উত্তাল হয়ে উঠে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। তবে এসব স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় ঠিক কতজন মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন এর পরিসখ্যান পাওয়া না গেলেও অনেকেই ধারণা করছেন নিহতের সংখ্যা বিশ বা এর কিছু অধিক হতে পারে। তবে, প্রায় কয়েকশ মানুষ নানাভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক ও পুলিশও রয়েছে। এছাড়াও নিহদের মধ্যে শিশু, নারীও রয়েছেন। এদের কেউ পথে কেউ বা আবার বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তবে, কোন পক্ষ থেকে ছোড়া গুলিতে তারা নিহত হয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকার সাড়ে ৬ বছরের রিয়া গোপ ১৯ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। চারদিন পর চিকিৎসাধিন অবস্থায় সে মারা যায়। একই দিন শহরের ডিআইটি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ১৭ বছর বয়সী গার্মেন্টকর্মী মো. রাসেল। এছাড়াও এদিন জালকুড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ব্যবসায়ী জামাল ভূঁইয়া।
২০ জুলাই চিটাগাং রোডে পুলিশ ও আন্দোলনকারিদের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল রাজু। একই সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায় বারান্দায় হেলিকপ্টার দেখতে এসে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ২০ বছর বয়সী গৃহিনী সুমাইয়া আক্তার। একই দিনে চিটাগাং রোডে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় মো. মেহেদী নামে একজন শিক্ষার্থী, শ্রমিক মো. হৃদয়, হোটেল ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহিন এবং ১০ বছর বয়সী পপকর্ন বিক্রেতা হোসেন মিয়া।
২১ জুলাই চিটাগাং রোডে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন মো. সজল নামে একজন শ্রমিক, জালকুড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারায যান পারভেজ হোসেন নামে একজন কলেজ ছাত্র এবং সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্যানিটারি মিস্ত্রী মো. ফয়েজ।
২৬ জুলাই চিটাগাং রোড গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অটোচালক আব্দুল লতিফ, শিমরাইল মোড় এলাকায় খানকা মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরাফাত হোসেন আকাশ।